দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায়শই একই ধরনের দুইটি জিনিস তুলনা করে থাকি। যেমন ধরা যাক, নাবিলের উচ্চতা ১৫০ ও তার বোন নোভার উচ্চতা ১৪৩ সেমি। এখন কীভাবে তুমি দুইজনের উচ্চতার মধ্যে তুলনা করবে বলো তো? একটা উপায় হল বিয়োগ করে পার্থক্য বের করা। অর্থাৎ, নাবিলের উচ্চতা তার বোন নোভার চেয়ে (১৫০-১৪৩) সেমি বা ৭ সেমি বেশি। এবারে চলো একটি টিকটিকি ও একটি পিঁপড়ার দৈর্ঘ্যের তুলনা করি। মনে করো, টিকটিকির দৈর্ঘ্য ৮ সেমি এবং পিপড়ার দৈর্ঘ্য ১ সেমি। তাহলে এখানেও টিকটিকি ও পিঁপড়ার দৈর্ঘ্যের পার্থক্য (৮-১) সেমি বা ৭ সেমি।
এখানে দেখা যাচ্ছে, নাবিল ও নোভার উচ্চতার পার্থক্য এবং টিকটিকি পিঁপড়ার দৈর্ঘ্যের পার্থক্য একই। কিন্তু ‘নাবিল ও নোভার উচ্চতার পার্থক্য ৭ সেমি এই কথাটা থেকে তাদের উচ্চতার ব্যাপারে যে ধারণা পাওয়া যায়; 'টিকটিকি ও পিঁপড়ার দৈর্ঘ্যের পার্থক্য ৭ সেমি' এই কথাটা থেকে যদি তুমি একই ধারণা পাও, তাহলে সেটা কতটুকু সঠিক হবে? তুমিই চিন্তা করে দেখো।
এর চেয়ে বরং কয়টি পিপড়া পরপর বসিয়ে একটি টিকটিকির দৈর্ঘ্যের সমান হয় সেটা জানলে এক্ষেত্রে আরও ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।
তুমি টিকটিকির দৈর্ঘ্যকে পিঁপড়ার দৈর্ঘ্য দিয়ে ভাগ করলে পাবে অর্থাৎ, ৮টি পিঁপড়া পরপর বসিয়ে একটি টিকটিকির দৈর্ঘ্যের সমান হয়।
আবার এভাবেও বলতে পারো, টিকটিকির দৈর্ঘ্য পিঁপড়ার দৈর্ঘ্যের ৮ গুণ বা, টিকটিকি দৈর্ঘ্যে পিঁপড়ার তুলনায় ৮ গুণ বড়।
গাণিতিকভাবে লেখা হয়, টিকটিকি ও পিঁপড়ার দৈর্ঘ্যের অনুপাত = ৮ : ১
আবার, পিঁপড়ার দৈর্ঘ্যকে টিকটিকির দৈর্ঘ্য দিয়ে ভাগ করলে পাবে:
অর্থাৎ, পিঁপড়ার দৈর্ঘ্য টিকটিকির দৈর্ঘ্যের ৮ ভাগের ১ ভাগের সমান। আবার এভাবেও বলতে পারো, পিঁপড়া দৈর্ঘ্যে টিকটিকির তুলনায় ৮ গুণ ছোট।
গাণিতিকভাবে লেখা হয়, পিঁপড়া ও টিকটিকির দৈর্ঘ্যের অনুপাত = ১ : ৮
এই অনুপাত থেকে কী বোঝা যায় সেটা ছবি দেখে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
* এমন আরও কয়েকটি ঘটনা খুঁজে বের করো যেখানে পার্থক্যের চেয়ে ভাগ করে বা অনুপাতের মাধ্যমে তুলনা করা সুবিধাজনক। * প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে যাদের তুলনা করা হচ্ছে তাদের পার্থক্য এবং অনুপাত দুটিই নির্ণয় করো। * কেন অনুপাতের মাধ্যমে তুলনা সুবিধাজনক সে সম্পর্কে তোমার যুক্তি দাও। * প্রতিটি ঘটনায় অনুপাত থেকে কী বোঝা যায় সেটা ছবিতে এঁকে প্রকাশ করো। (উপরের টিকটিকি ও পিঁপড়ার দৈর্ঘ্যের অনুপাতের ছবির মতো করে আঁকতে পারো) |
চলো এবার অনুপাতের সাহায্যে বাস্তব সমস্যা সমাধান করি।
▪️শওকতের ভর ৩০ কেজি এবং তার পিতার ভর ৬০ কেজি। শওকতের ভর তার পিতার ভরের কতগুণ?
পিতা ও শওকতের ভরের অনুপাত হবে:
= (লব ও হরকে ৩০ দ্বারা ভাগ করে)
= ২ : ১
এখানে, পিতার ভর শওকতের ভরের বা ২ গুণ।
লাল কলম ও নীল কলমের প্যাকেট সংখ্যার অনুপাত এবং লাল কলম ও নীল কলম সংখ্যার অনুপাত কি একই?
হ্যা-
না –
লাল ও নীল কলমের প্রতি প্যাকেটে একই সংখ্যক কলম থাকলে প্যাকেট সংখ্যা থেকেই কলমের সংখ্যার অনুপাত নির্ণয় করা যায়। তবে লাল ও নীল কলমের প্রতি প্যাকেটে কলম সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হলে আর সেটা সম্ভব হয় না। |
এখন, ভেবে দেখো তো একটি শিশুর বয়সের সাথে অন্য একটি শিশুর ভর কি তুলনা করা যাবে? কখনোই না। তুলনার ক্ষেত্রে বিষয় দুইটি সমজাতীয় হতে হবে।
🔹আবার মনে করি, ভাইয়ের বয়স ৩ বছর ও বোনের বয়স ৬ মাস। তাদের বয়সের অনুপাত বের কত?
এখানে, ভাইয়ের বয়সের সাথে বোনের বয়স এই সমজাতীয় দুটি রাশির তুলনা করা হচ্ছে। খেয়াল করো ভাইয়ের বয়স কিন্তু বোনের চেয়ে বেশি । অর্থাৎ, ভাই এখানে বোনের চেয়ে বড়।
এখন যদি এককের দিকে লক্ষ না করেই সরাসরি তুলনা করি তাহলে কী হবে বলতে পারো?
ভাই ও বোনের বয়সের অনুপাত হবে তাহলে, ব্যাপারটা হবে অনেকটা এরকম যে ভাইয়ের বয়স বোনের বয়সের অংশ বা অর্ধেক। কিন্তু আসলে কী তাই? ভাইয়ের বয়স নিশ্চয়ই বোনের বয়স থেকে কম নয় আর ৩ বছর মোটেও ৬ মাসের অর্ধেক না। অবশ্যই হিসাবে কোনো একটা ভূল হচ্ছে।
লক্ষ করো, পূর্বের সবগুলো ক্ষেত্রে আমরা একই এককবিশিষ্ট দুটি রাশির তুলনা করেছি তাই অনুপাতগুলো সঠিক ধারণা দিয়েছে।
এখানে বছর এবং মাস এই দুইটা একক নিয়ে তুলনা করাতেই আমরা সঠিক অনুপাত পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে সমজাতীয় হলেও দুইজনের বয়স সরাসরি তুলনা করা যাবে না। তুলনার বিষয় দুইটি একই একক বিশিষ্ট হতে হবে। তাই দুইজনের বয়সকেই বছরে অথবা মাসে রূপান্তর করে নিতে হবে। আমরা এক্ষেত্রে ভাই ও বোন দুজনের বয়সই মাসে রূপান্তর করবো।
তাহলে, ভাইয়ের বয়স ৩ বছর = ৩৬ মাস ('.' ১ বছর = ১২ মাস) এবং বোনের বয়স ৬ মাস তাহলে, ভাই ও বোনের বয়সের অনুপাত :
= (লব ও হরকে ৬ দ্বারা ভাগ করে)
= ৬ : ১
মনে করো একটি শিশুর বয়স ৬ বছর এবং অন্য একটি শিশুর বয়স ৯ বছর ৬ মাস।
তাহলে শিশু দুইটির বয়সের অনুপাত কীভাবে নির্ণয় করবে?
আমরা জানি অনুপাত নির্ণয়ের জন্য দুইটি রাশিকেই একই একক হতে হবে। প্রথমে দুইটি শিশুর বয়সকেই মাসে রূপান্তর করো।
■ দুটি শিশুর বয়সকেই বছরে রূপান্তর করে তাদের বয়সের অনুপাত নির্ণয় করো। ■ দুটি শিশুর বয়স মাসে রূপান্তর করে প্রাপ্ত অনুপাতের সাথে মিলিয়ে দেখো |
---|
■ দুইটি সমজাতীয় রাশির একটি অপরটির তুলনায় কতগুণ বা কত অংশ তা একটি ভগ্নাংশ দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এই ভগ্নাংশটিকে রাশি দুইটির অনুপাত বলে। ■ তবে তুলনা করতে সমজাতীয় রাশির একক একই হওয়া প্রয়োজন। রাশি দুটির একক ভিন্ন ভিন্ন হলে তারা সমজাতীয় হয় না। তাই তুলনা করতে হলে এককগুলোকে একজাতীয় বা একই করতে হবে। ■ সমজাতীয় এবং একই একক বিশিষ্ট দুটি রাশির ভাগফল হওয়ায় অনুপাতের কোনো একক নেই। |
---|
১) নিচের সংখ্যাদ্বয়ের প্রথম রাশি ও দ্বিতীয় রাশির অনুপাত নির্ণয় করো:
(ক) ২৫ ও ৩৩৫
(খ) ১.২৫ ও ৭.৫
(গ) ১ বছর ২ মাস ও ৭ মাস
(ঘ) ৭ কেজি ও ২ কেজি ৩০০ গ্রাম
(ঙ) ২ টাকা ও ৪০ পয়সা
২) তুমি ক্লাসে কতগুলো বই ও কতগুলো খাতা নিয়ে এসেছ তা গণনা করে নিচের কাজগুলো করো:
ক) খাতা ও বইয়ের সংখ্যার অনুপাত নির্ণয় করো।
খ) খাতাগুলোর মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং বইগুলোর মোট পৃষ্ঠাসংখ্যার অনুপাত নির্ণয় করো।
৩) স্কেলের সাহায্যে তোমার গণিত বইয়ের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মেপে বের করো এবং এদের মধ্যকার অনুপাত নির্ণয় করো।
৪) তোমার শ্রেণিকক্ষ, বাড়িতে বা অন্য কোনো স্থানে ৩টি ভিন্ন ভিন্ন টেবিল খুঁজে বের করো।
ক) প্রতিটি টেবিলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ করো এবং তাদের মধ্যকার অনুপাত নির্ণয় করো।
খ) কোন টেবিলের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত সবচেয়ে বেশি তা নির্ণয় করো।
৫) তুমি কি এমন কোনো গল্প বা ঘটনা জানো যেখানে ‘অনুপাত” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে? অথবা কোথাও কি ‘অনুপাত’ শব্দটি বা অনুপাত চিহ্ন : লেখা দেখেছ? এরকম কয়েকটি বাস্তব ঘটনা খুঁজে বের করো এবং কীভাবে খুঁজে পেলে বা কোথায় পেয়েছ তার ছবি অথবা বর্ণনা লিখে শিক্ষক ও তোমার সহপাঠীদেরকে বলো।
৬) তোমাদের চারপাশে বাস্তবে দেখেছ বা শুনেছ এমন কিছু উদাহরণ খুঁজে বের করো যেখানে একই রকম বা সমজাতীয় দুইটি রাশির মধ্যে তুলনা করা হয়েছে কিন্তু একক ভিন্ন ভিন্ন ছিল। তারপর কীভাবে ভিন্ন এককগুলোকে একই এককে রুপান্তর করা হলো তা লেখো।
রবির কাছে ৮টি মার্বেল এবং ডেভিডের কাছে ১২টি মার্বেল আছে।
তাহলে, রবি এবং ডেভিডের মার্বেল সংখ্যার অনুপাত = ৮ : ১২
এবার, রবি ও ডেভিড প্রতি প্যকেটে ২টি করে মার্বেল নিয়ে নিজেদের মার্বেলগুলো প্যাকেট করলো।
এখন, রবির কাছে মার্বেলের প্যাকেট আছে = = ৪টি
এবং, ডেভিডের কাছে মার্বেলের প্যাকেট আছে = = ৬টি
তাহলে, এখন রবি এবং ডেভিডের মার্বেলের প্যাকেটের সংখ্যার অনুপাত = ৪ : ৬ যেহেতু, প্রতিটি মার্বেলের প্যাকেটেই সমান সংখ্যক মার্বেল আছে।
তাই, রবি এবং ডেভিডের মার্বেলের সংখ্যার অনুপাত হবে: ৮ : ১২।
এবার, রবি ও ডেভিড প্রতি প্যাকেটে ৪টি করে মার্বেল নিয়ে নিজেদের মার্বেলগুলো প্যাকেট করল।
এবং, ডেভিডের কাছে মার্বেলের প্যাকেট আছে = = ৩ টি
তাহলে, এখন রবি এবং ডেভিডের মার্বেলের প্যাকেটের সংখ্যার অনুপাত = ২ : ৩
এখন, তাই, রবি এবং ডেভিডের মার্বেলের সংখ্যার অনুপাত হবে: ৮ : ১২
তাহলে, দেখা যাচ্ছে যে, ৮ : ১২, ৪ : ৬ এবং ২ :৩ অনুপাতগুলোর মান আসলে একই এবং এদেরকে সমতুল অনুপাত বলা হয়। আর ২ : ৩ অনুপাতটি হচ্ছে অনুপাতের সরলীকৃত রূপ।
:- ২ : ৩ ও ৪ : ৬ সমতুল অনুপাত।
কোনো অনুপাতের অসংখ্য সমতুল অনুপাত রয়েছে। যেমন, ২:৩, ৪ : ৬ ও ৮ : ১২ সমতুল অনুপাত।
লক্ষ করো : ■ কোনো ভগ্নাংশের লব ও হরকে শূন্য (০) ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ বা ভাগ করলে ভগ্নাংশের মানের পরিবর্তন হয় না এবং সমতুল ভগ্নাংশ পাওয়া যায়। ■ কোন ভগ্নাংশকে লব ও হরের গসাগু দিয়ে ভাগ করে ভগ্নাংশটিকে লঘিষ্ঠ আকারে প্রকাশ করা যায়। ■ আমরা জানি, অনুপাত একটি ভগ্নাংশ। অনুপাতকে ভগ্নাংশে রূপান্তর করা হলে- ■ অনুপাতের প্রথম পদটি ভগ্নাংশের লব হিসাবে লেখা হয় এবং একে বলা হয় অনুপাতের পূর্ব রাশি। অনুপাতের দ্বিতীয় পদটি ভগ্নাংশের হর হিসাবে লেখা হয় এবং একে বলা হয় অনুপাতের উত্তর রাশি। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সমতুল ভগ্নাংশ ও সমতুল অনুপাত মূলত সমার্থক। অর্থাৎ, অনুপাতের ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি- ■ অনুপাতের পূর্ব ও উত্তর রাশিকে শূন্য (০) ব্যতীত কোনো সংখ্যা দ্বারা গুণ বা ভাগ করলে মানের কোনো পরিবর্তন হয় না এবং প্রাপ্ত অনুপাতগুলোকে সমতুল অনুপাত বলা হয়। ■ সমতুল ভগ্নাংশ গঠন করার উপায়েই সমতুল অনুপাত গঠন সম্ভব। ■ একটি অনুপাতের রাশি দুইটিকে তাদের গসাগু দ্বারা ভাগ করে অনুপাতটিকে সরলীকরণ করা যায়। |
---|
তাহলে, খালিঘরের সংখ্যাগুলো জানার জন্য আমরা সমতুল ভগ্নাংশ বা সমতুল অনুপাতের বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করতে পারি:
নিচের সমস্যাগুলো সমাধান করো :
১) নিচের অনুপাতগুলোকে সরলীকরণ করো
(ক) ৯ : ১২ (খ) ১৫ : ২১ (গ) ৪৫ ৩৬ (ঘ) ৬৫ : ২৬
২) নিচের সমতুল অনুপাতগুলোকে চিহ্নিত করো
১২ : ১৮; ৬ : ১৮; ১৫ : ১০; ৩ : ২; ৬ : ৯; ২ : ৩; ১ : ৩; ২ : ৬; ১২ : ৮
৩) কোনো একটি স্কুলে ৪৫০ জন ছেলে এবং ৫০০ জন মেয়ে আছে। স্কুলের ছেলে ও মেয়ের সংখ্যার অনুপাতকে সরলীকৃত আকারে লেখো।
৪) নিচের সমতুল অনুপাতগুলোর খালিঘর পূরণ করো
■ তোমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো তিনটি কক্ষের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত তা পরিমাপ করো অথবা শিক্ষকের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ করো। ■ প্রতিটি কক্ষের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত বের করো। |
---|
আরও দেখুন...